আমার শৈশবের কিছু কথা।

আমি একজন ডাই হার্ট হাসান ফ্যান। হাসান? কোন হাসান? জ্বী আমি ব্যান্ডস্টার হাসানের কথা বলছি। জানি অনেকেই তাকে পচন্ড অপছন্দ করেন। মজার বিষয় কি জানেন আমি নিজেও একসময় পাগল বলতাম, মেয়েদের মতো লম্বা চুল, কি ভীষন চীকন কন্ঠ। তারপর এল এতো কষ্ট কেন ভালবাসা। অনেকের মনে আছে সেই একটি গান কি পরিমান জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এই গানের তুমুল জনপ্রিয়তা দেখে কিনে আনলাম বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম ১০ টি হিট এলব্যামের একটি "বেষ্ট অভ হাসান"...অহ কি এক মাদকতা। একাকী, আজ এই মেঘে ঢাকা রাত, ভুলে গেছ, প্রশ্ন,এতো দূরে যে চলে গেছ,পাহাড়ের চুড়ায় এই সব কালজয়ি গানগুলো সারাদিন শুনতাম। পাগলের মতো শুনতাম। এর পর আর্কের এ্যালবামগুলো কিনে আনলাম। জন্মভূমি আর স্বাধীনতার হাসান কে পেলাম। সুইটি, তাজমহল,যারে যা উড়ে যা,গুরু,বাংলাদেশ,প্রেমা এসব শুনে উপলদ্ধি করলাম কী ভীষন ক্ষমতদধর একজন শিল্পি আমরা পেয়েছি। আমি পেয়েছি আমার স্বপ্নের শিল্পি হাসান কে...যার গায়কি, যার কিছু কিছু টান শুনে অবাক হয়ে ভাবতাম কোন মানুষের পক্ষে কি এভাবে টান দেওয়া সম্ভব?



সেই সময় বাচ্চু আর জেমসের সাথে সমান তালে গান করে গেছেন হাসান। অনেকেই হয়তো জানেন না ৯০ এর দশকের শেষের দিকে হাসান ছিলেন সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া শিল্পি। হাসান,জেমস আর বাচ্চুকে নিয়ে কতো কতো কালজয়ি মিক্সড এলবাম বের হোল।

অনেকের কাছে শুনেছি সেই সময়ের হাসানের তুমুল জনপ্রিয়তার মুখে আইয়ুব বাচ্চুর পলিটিক্স আর মাথা নষ্ট করা জনপ্রিয়তায় হাসানের মাথা ঘুরে যাওয়ায় প্রিয় আর্ক ব্যান্ডটি ভেঙ্গে যায়। একবার ভাবুন হাসান, পঞ্চম আর টুলুর মতো তিন তিনজন মেধাবী মানুষের গড়া এই ব্যান্ডটি এখনো টিকে থাকলে আমাদের ব্যান্ড জগত কতটাই না সেরা সেরা গান পেত। মাত্র ৩টি এলবাম বের হয়েছিল এই কালজয়ী ব্যন্ডটির। গানগুলো শুনে দেখুন কি অদ্ভুদ তাদের সৃষ্টি।

আমার মামার কাছে শুনেছিলাম হাসান নাকি বাংলাদেশের একমাত্র শিল্পি যে ৭টি স্কেলে গান গাইতে পারত। হাসান খুব হাই স্কেলে গান গায় যা বাংলাদেশে সচরাচর দেখা যায় না। এ কারনে তার গায়কী অনেকের কাছে অপছন্দ হতে পারে। আমি ইংরেজী গান তেমন না শুনলেও মাইকেল জ্যাকসনের হাই পিচ কিছু গান শুনেছি যা অনেকটা মেয়েদের মতো কন্ঠ বলে মনে হয়েছে। তাই মনে হয় হাই পিচ কন্ঠগুলো এমন হয়।

যাই হোক, আর্ক ব্যান্ড ভেঙ্গে যাওয়ার আরেকটি কারন নাকি ছিল টুলুর প্রবাস জীবন। যে কারনে অনেক অতিথি শিল্পিকে নিতে হোত মাঝে মাঝে। কেউ সুইটি গানের সেই বিখ্যাত ভিডিওটি দেখলে সেই গানে আজকের বালাম আর হাবিবকে দেখতে পাবেন। আবার অভিমানি নয় গানটিতে যেই মুটকু পিয়ানো বাদক দেখ যায় সেই আজকের হাবীব। আর্ক ভেঙ্গে যাবার পর প্রয়াত সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার মবিনের সাথে মিলে হাসান গড়ে তুলে স্বাধীনতা। উপহার দেয় কারবালা এলবামটি। সেই সময় হাসানের এত্তো ক্রেজ ছিল যে পেপসির মতো প্রতিষ্ঠান সেই এলবামটি স্পন্সর করে।

হাসানের জনপ্রিয়তার ফায়দা তুলতে সেই সময় সাউন্ডটেক, সঙ্গিতা সহ অনেক প্রতিষ্ঠান ভুরি ভুরি এলবাম বের করতে থাকে। যার কারনে হাসান অনেক মানহীন গান করেন। এর পর স্বাধীনতা এলবামটিও ভেঙ্গে যায়। মাঝে বেশ কয়েক বছর সঙ্গীত থেকে দূরে চলে যান হাসান। তার ভক্তশ্রোতারাও ধীরে ধীরে ভুলে যেতে থাকেন তাকে। এভাবে আস্তে আস্তে আমাদের ব্যান্ড সংগীতের একজন দিকপাল হারিয়ে যান ...

সংগীত অংগনের অনেকেই জানেন বিশাল অমিত সম্ভবনা ছিল হাসানের কারন তিনি যেই স্কেলে যেই মানের গান করতেন তা এই উপমহাদেশে আর কেউ করতেন বলে মনে হয় না। কিন্তু সেই কন্ঠকে কাজে লাগানোর মতো ভাল সুরকার কই আমাদের দেশে। পাহাড়ের চূড়ায় বা তাজমহল গানগুলোর কম্পোজিশন আর হাসানের গায়কি শুনে দেখুন। সস্তা জনপ্রিয়তার চুটুল কোন গান নয় এগুলো। খুব বেশি উন্নত গান। এই গানগুলো গেয়েছেন হাসান, তিনি হয়তো হারিয়ে যাবেন কিন্তু তার এই সৃষ্টিগুলো আরো অনেক অনেক দিন থেকে যাবে ইনশাল্লাহ।

যাই হোক, এখন বড় হয়েছি। ব্যস্ততা বেড়েছে। আগের মতো ক্রেজ নেই। তারপরো মাঝে মাঝে সুইটি, অভিমানী নয়, আজ এই মেঘে ঢাকা রাত গানগুলো শুনলে নষ্টালজিক হয়ে যায় আর বুকের ভেতর একটা চাপা কষ্ট অনুভব করি আমার প্রিয় শিল্পি হাসান আর প্রিয় ব্যান্ড আর্কের জন্য। মাঝে মাঝে মনে হয় আবার যদি হাসান, পঞ্চম আর টুলু এই ত্রিরত্ন এক্ত্র হয়ে কিছু করতেন কি অদ্ভুদ সুন্দর না হোত ব্যাপারটা। উফ তা যে হবার নয়...



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

হাসান আর্কের একক এন্ড মিক্সড এ্যালবাম সমূহ……

বিশ্ব সঙ্গীত দিবসের শুভেচ্ছা বার্তা, (হাসান আর্ক)

কারবালা - হাসান (স্বাধীনতা ব্যান্ড) ২০০২