আমাদের প্রিয় আশিকুজ্জামান টুলু স্যার, যার কারনে পেয়েছিলাম প্রিয় হাসান ভাইকে।
আমাদের প্রিয় আশিকুজ্জামান টুলু স্যার। স্রোতের বিপরীতে যে কজন মানুষ যুদ্ধ করে বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং জনপ্রিয় করেছেন তাদের অন্যতম টুলু স্যার। বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতের যে ক’জন জীবন্ত কিংবদন্তী আছেন তাদের অন্যতম একজন মানুষ। যিনি সবসময় থেকেছেন প্রচার বিমুখ। কিন্তু প্রচার বিমুখ থাকলেও বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতের সোনালী দিনগুলোর শ্রোতারা একটিবারও তাদের প্রিয় টুলু স্যার কে ভুলে যায়নি ও যাবেও না। আজকের বর্তমান প্রজন্মের শ্রোতাদের জন্য দুর্ভাগ্য যে তারা এই মানুষটির নতুন কোন সৃষ্টি পায়নি বললেই চলে আর আমাদের জন্য কষ্ট যে আমরা টুলু ভাইয়ের সেরা কিছু থেকে অনেকদিন ধরে বঞ্চিত।আশিকুজ্জামান টুলু’ স্যারের রক্তে গান মিশে আছে। কারন তাঁরবাবা দেশের প্রবীণ একজন সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব ওস্তাদ রইসউদ্দিন মুন্সী। যার কাছে গান শিখেছেন দেশের অনেক গুনি শিল্পীরা। তাইতো গানটা তাঁর হাতে ছিল ছেলেখেলা। অবলীলায় যে কোন কথায় চমৎকার সুর বসিয়ে তাকে একটি দুর্দান্ত গানে পরিণত করতে পারতেন টুলু স্যার দেশসেরা একজন কীবোর্ডিসট , সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক ও সঙ্গীতশিল্পী এই টুলু ভাই। যিনি শুধু নিজে যত না ভালো গান গেয়েছেন তার চেয়েও অনেক অনেক বেশি ভালো গান অন্যদের দিয়ে গাইয়েছেন। যার কারনে আমরা পেয়েছিলাম আমাদের প্রিয় ব্যক্তিত্ব হাসান ভাই, শামিম, পঞ্চম মুন, খালিদ +চাইম)এর মতো প্রতিভাবান ও দারুন কিছু কণ্ঠ। যিনি ছিলেন ‘চাইম’ ব্যান্ড এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও ব্যান্ড লিডার ,ভোকাল ও কীবোর্ডিসট। ‘চাইম’ তাদের প্রথম অ্যালবামটির মতো আর কোন অ্যালবাম পরবর্তীতে উপহার দিতে পারেনি। কারন প্রথম অ্যালবামে ছিলেন যে একজন আশিকুজ্জামান টুলু যিনি পরবর্তীতে ‘চাইম’ ব্যান্ড ত্যাগ করেন । যার ফলে ‘চাইম’ পরবর্তীতে ‘নারী’ ও ‘জন্ম’ অ্যালবাম দিয়ে শ্রোতাদের মাঝে সাড়া ফেলতে পারেনি। ‘চাইম’ এর প্রথম অ্যালবাম এর সবকটি গানের সুর করেছেন টুলু স্যার যে গানগুলো আজ প্রায় ৩০ বছর পরেও সেই সময়ের শ্রোতাদের মুখে মুখে। ৯০এর শুরুতে ‘চাইম’ ছেড়ে টুলু স্যার গঠন করেন ‘আর্ক’ ব্যান্ডদল। পরবর্তীতে ‘আর্ক’ শ্রোতাদের কাছে অন্যতম একটি উম্মাদনার নাম হয়, অন্যতম একটি প্রিয় ব্যান্ড হয় যার পেছনে এই টুলু স্যারের অবদান অনস্বীকার্য। ব্যান্ড অ্যালবামের বাহিরে টুলু স্যার ছিলেন সবসময় সক্রিয়। এই টুলু স্যার ৯০ দশকে শুরুতে ব্যান্ড অ্যালবামের বাহিরে ব্যান্ড শিল্পীদের নিয়ে প্রকাশিত ‘ব্যান্ড মিক্সড’ অ্যালবাম এর ধারনা প্রবর্তন করেন যা সেসময়ে অডিও ইন্ডাস্ট্রিতে দারুন সাড়া ফেলে। ‘স্টারস’ অ্যালবাম দিয়ে অডিও ইন্ডাস্ট্রিতে চালু হয় ‘ব্যান্ড মিক্সড’ অ্যালবাম নামের নতুন একটি ধারা। একই অ্যালবামে শ্রোতাদের প্রিয় ব্যান্ডগুলোর প্রিয় কণ্ঠদের গান যা পেয়ে শ্রোতারা হয় বিস্মিত ও আনন্দিত। এরপর অডিও ইন্ডাস্ট্রিতে ‘ব্যান্ড মিক্সড’ ধারাটা কি পরিমাণ অবদান রাখে তা আলাদা এক ইতিহাস আর যে ইতিহাসের জন্ম দেন এই আশিকুজ্জামান টুলু। সেই সময়ের শ্রোতাদের চাহিদা ও রুচির কথা বুঝে টুলু ভাই প্রকাশ করেন ইউরোপ আমেরিকার জনপ্রিয় ব্যান্ড দলগুলোর বিখ্যাত সব ইংরেজি গানের বাংলা সংস্করন। ‘কপিয়ার’ নামের সেই অ্যালবামটিও শ্রোতাদের কাছে দারুন জনপ্রিয় হয়। এই ‘কপিয়ার’ অ্যালবামের মাধ্যমে জনপ্রিয় কণ্ঠ হাসান ভাইয়ের আগমন হয়েছিল। এভাবে সবসময় নিত্য নতুন কিছুর সাথে শ্রোতাদের পরিচয় করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতেন আশিকুজ্জামান টুলু। যিনি অনেক অনেক দারুন গানের স্রষ্টা। অনেক শিল্পী তার সুরের গান গেয়ে পরিচিতি পেয়েছেন কিন্তু টুলু ভাই রয়ে গেছেন চিরদিন প্রচারের বাহিরে। কিন্তু বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীত ও শ্রোতা ভক্তরা কোনদিন টুলু স্যারের অবদান ভুলে যেতে পারবে না, কারন টুলু স্যার তাঁর অসাধারন কাজ গুলোর মাঝে বেঁচে আছেন ও বেঁচে থাকবেন চিরদিন। আজকের বর্তমান শিল্পী, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালকদের আশিকুজ্জামান টুলু স্যারের কাজগুলো থেকে শিক্ষা নেয়া উচিৎ কিভাবে মানসম্পন্ন অসাধারন সব গান শ্রোতাদের উপহার দেয়া যায়। এতে করে আমাদের অডিও ইন্ডাস্ট্রি অনেক উপকৃত হবে। টুলু স্যার আপনি কি জানেন যে বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীত ও তাঁর ভক্তরা আজো আপনাকে অনবরত খুব মিস করে? যেখানে থাকুন ভালো থাকুন সবসময়, এই দোয়া ও প্রত্যাশা রইলো আমাদের (ওল্ড ইজ গোল্ড পরিবারের পক্ষ থেকে)
বিদ্রঃ বিশেষ ধন্যবাদ প্রিয় পাপ্পু ভাইকে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন