রকস্টার হাসান কে নিয়ে "হাসান মাহমুদ" (ম্যাক্স হাসান)র শৈশব কৈশর গল্প।

জানিনা আমার প্রান প্রিয় ব্যান্ড শিল্পী আর্ক এর হাসান ভাই কখনো জানবে কিনা,আমার শৈশব এবং কৈশর জীবনে তার গানের প্রভাব কতোটুকু জায়গা দখল করেছিলো,আজ জানাবো সেই অব্যাক্ত কিছু বাস্তব সত্য ঘটনা যা আজ আমি আমার প্রিয় পেইজ  মাধ্যমে,অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই এই পেইজের সমস্ত কলাকৌশলীদের,যার কারনে আমি আমার প্রিয় শিল্পী"হাসান কে"মনের গহীনে আমার সঙ্গীত ভূবনে লালন করে নিরবে ভালোবেসে যাই,আমি মিডল ক্লাস পরিবারের একজন অত্যান্ত"হাসান প্রেমী"ফ্যান,শুনুন তাহলে আমার কিছু হাসান ফ্যানের কান্ডকারখানা,প্রাইমারী স্কুলে যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি তখনকার ঘটনা এটি,মাঝে মাঝে স্কুলে যে কামাই হতো মানে অনুপস্থিত থাকতাম প্রথম প্রথম স্যারেরা কিছু বলতো না আমাকে,কারন আমি ঐ স্কুলের হেডমাস্টারের ছেলে ছিলাম বিধায়,একদিন আমার এক বন্ধু আমার সাথে স্কুলে যাচ্ছিল ও স্কুলে চলে গেল আমি আমাদের পাড়ার একটি অডিও সিডি ক্যাসেটের দোকানের সামনে দাড়িয়ে রইলাম ১ ঘন্টা,দাড়িয়ে প্রিয় শিল্পী হাসানের গান শুনছিলাম(তখন জানিনা পরে জেনেছি উনি আর্ক ব্যান্ডের ভোকাল হাসান) এই কারনে আমি সেদিন ক্লাস মিস করলাম,তখন নাকি স্যার আমার বন্ধুকে আমার ব্যাপারে জানতে চাইলো"হাসান মাহমুদ"কোথায় ছিলো?ও স্কুলে দেরি করে আসলো কেনো?ও পড়ালেখার প্রতি এত অমনোযোগী হয়ে পড়ছে কেনো?স্যারের ছেলে যদি এভাবে স্কুলে ক্লাস ফাকি দেয় বাকিরা কি করবে?তখন আমার বন্ধু বলে দেয় হাসান স্কুলে আসার সময়ে ঐ সিডির দোকানের সামনে দাড়িয়ে থেকে কিসব লম্বা চুলওয়ালা কতগুলা শিল্পি যে আছে গান গায় ওই গুলার মেয়ে কন্ঠের গান শুনে,তখন স্যার আব্বুর কাছে আমার এসব ব্যাপারে নালিশ দিলো,সেদিন আব্বু বাড়িতে এসে আমাকে জিঘ্গেস করলো,কিরে তুই নাকি পড়ালেখা বাদ দিয়ে স্কুল ফাঁকি দিয়ে ওই অডিও সিডি ক্যাসেটের দোকানের সামনে দাড়িয়ে গান শুনিস,সেদিন আব্বু আমাকে অনেক মেরেছিলো ঘরের সবার সামনে,বারন করেছিলো ওই দোকানের সামনে যেনো আর না দাড়াই স্কুল ফাঁকি না দিয়ে মনেযোগ দিয়ে ঠিকমত যেন লেখাপড়া করি,তারপরে আব্বু ঐ সিডির দোকানদারের কাছে গিয়ে বললো হাসানকে যদি তোমার দোকানের আশে পাশে দেখ তাকে পিটাবা, দোকানদার একদিন বললো হাসান স্কুলের টাইমে এখানে আসিস না তোর আব্বা আমাকে অনেক শাশিয়ে গেছে,তোকে যেন এখানে দেখলে আমি যেন মেরে তাড়িয়ে দেই,আমি তার কথা শুনলামনা হাসানের গান চললেই আমি সেখানে দাড়িয়ে থাকতাম আর কোন দিকে যেতাম না,এই ভাবে অনেক দিন চলতে থাকলো,একদিন আমি হাসানের গান শুনতে শুনতে আর স্কুলে যাইনি বই গুলো ঐ দোকানের পিছনে লুকিয়ে রেখে,সারাদিন ঐখানে ক্যারাম বোর্ডের দোকানের ভিতর লুকিয়ে থাকলাম,তারপর স্যারেরা আমাকে ক্লাসে দেখতে না পেয়ে সেদিন আব্বুর কাছে বিচার দিল। আব্বু কার কাছে জানি খবর পেয়ে যেন আমাকে ওই ক্যারাম বোর্ডের ঘরে এসে খুঁজতে লাগলো দেখলাম উনি ভয়ানক ভাবে রেগে গেছেন আর রাগে গর্জন করতে লাগলেন,আমি ঘরে দরজার আড়ালে লুকিয়ে ভয়ে কাঁপতে লাগলাম,একটা মোটা বেতের লাঠি নিয়ে এসেছিলেন সঙ্গে করে,আমি কোনো রকমে আব্বুর চোখকে ফাঁকি দিয়ে প্রান নিয়ে ওখান থেকে পালিয়ে যাই,আমাকে খুজতে থাকেন,আমাকে না পেলেও ঠিকই আমার বই গুলো ঐ সিডির দোকানের ক্যারাম বোর্ড খেলার রুমে পেয়ে গেলেন এবং দোকানদারকে অনেক বকুনি দিলেন এতে দোকানদার আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে গেলেন, এর পরে যখন আমি দোকানে গেলাম বই আনতে তখন দোকানদার আমাকে থাপ্পড় দেন গালি দেন,বললেন আমি যেন ভূলেও তার দোকানের ত্রিসীমানায় না যাই,আমি সেদিন অনেক কাঁদি,ওই দিন বাসায় আব্বু আমাকে অনেক মারধর করেন,এত কিছুর পরেও আমি বেহায়ার মত পরের দিন ঐ দোকানে হাসানের গান চললে দোকানের পিছনে লুকিয়ে লুকিয়ে গিয়ে দাড়িয়ে শুনতাম,বাড়ি থেকে প্রতিদিন আমাকে স্কুলের টিফিন বাবদ ২ টাকা করে দেওয়া হত,আমি ওই ২ টাকা পেয়ে অনেক অনেক খুশি থাকতাম কারন ঐ সময়ে ২ টাকা দিয়ে ভালো টিপিন করা যেত।,হাসানের ক্যাসেট কিনবো এই আশায় কখনো ওই টাকা খরচ করতামনা,আমাদের তখন বাসায় ক্যাসেট প্লেয়ার ছিল না,আব্বু আমার পড়ালেখা ছাড়া কিছুই বুঝতো না ভাবতো ক্যাসেট প্লেয়ার বাসায় নিলে লেখাপড়া নষ্ট হয়ে যাবে,আমি এক বন্ধুর বাসায় গিয়ে হাসানের গান শুনতাম,আমি আমার টিপিন খরচ বাচিয়ো দু টাকা করে প্রায় ৩০ টাকা জমিয়ে হাসানের একটা ক্যাসেট কিনি,নাম ছিল"জন্মভুমি"তখন আমি ওই বন্ধুর বাসায় গিয়ে তাদের ক্যাসেট প্লেয়ার চালিয়ে গান শুনতাম,কখনো কাজিনদের বাসায় কখনো অন্যের বাসায়,কখনো অন্য কোন সিডির দোকানে।আমার নানার বাড়িতে ক্যাসোট প্লেয়ার ছিল,আমি নানার বাড়িতে বেড়াতে গেলে হাসানের ক্যাসেট সাথে করে নিয়ে যেতাম,একবার আমার এক বন্ধুর বাসা থেকে আমার এই ক্যাসেটটা চুরি হয়ে যায়,আমি তখন মনে মনে অনেক ব্যাথা পাই বন্ধু আমাকে বলে আরেকটা কিনে দেবে পরে আর সে কিনে দেয়নি,পরে ঈদে বকশিস পাওয়া টাকা দিয়ে হাসানের ঐ ক্যাসেটটা আবার কিনি,তখন আমাদের বাসায় রেডিও ছিল যখন রেডিওতে,ব্যান্ডের গান প্রচার করা হতো,তখন আমি মনে মনে আল্লাহর কাছে বলতাম হাসানের গান দেওয়ার জন্য,তখন রেডিও তে জেমস, আইয়ুব বাচ্চু,নকীব খান এদের গান বেশি দিত,যখন হাসানের গান দিত তখন আমি মনে হয় পৃথিবীতে সবচেয়ে খুশি হতাম,আমি যখন হাই স্কুলে উঠি তখন সর্ব প্রথমে আমাদের টিভি এবং ক্যাসেট প্লেয়ার কিনা হয়,তখন আর কোনো বাঁধা ছিলোনা গান শুনতে,পড়ালেখার মাঝে অবসর যখন পেতাম মনের আনন্দে হাসানের গান শুনতে পারতাম,পরবর্তীতে হাসানের অন্যান্য মিক্সড এলবাম ও আর্কের এলবাম সংগ্রহ করে শুনতে থাকি,সেই থেকে আমি হাসানের অন্ধ ভক্তে রুপান্তরিত হই,

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

হাসান আর্কের একক এন্ড মিক্সড এ্যালবাম সমূহ……

হাসান ও আর্ক ব্যান্ডের সংক্ষিপ্ত বিবরনঃ

কারবালা - হাসান (স্বাধীনতা ব্যান্ড) ২০০২